ভূমিকা
বাংলাদেশের ইতিহাস
আর
ঐতিহ্যের গর্বিত
প্রতীকগুলোর একটি
হচ্ছে
লালবাগ কেল্লা। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই
ঐতিহাসিক দুর্গটি আজও
অগণিত
দর্শনার্থী, ইতিহাসপ্রেমী ও
পর্যটকদের আকর্ষণ
করে।
মুঘল
আমলের
স্মৃতিচিহ্ন বহনকারী লালবাগ
কেল্লা
শুধু
একটি
স্থাপত্য নয়,
এটি
যেন
একটি
জীবন্ত
ইতিহাসের বই,
যার
প্রতিটি ইট
আর
দেয়াল
সাক্ষ্য দেয়
এক
সমৃদ্ধ
অতীতের।
লালবাগ কেল্লার নির্মাণ ইতিহাস
লালবাগ
কেল্লার নির্মাণ শুরু
হয়েছিল ১৬৭৮
সালে,
যখন
মুঘল সুবাদার শাহজাদা আজম শাহ (মুঘল
সম্রাট
আওরঙ্গজেবের পুত্র)
বাংলার
শাসনভার গ্রহণ
করেন।
আজম
শাহ
ঢাকাকে
আরও
শক্তিশালী করতে
এই
দুর্গ
নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।
তবে
পরবর্তীতে তিনি
দিল্লি
ফিরে
গেলে
নির্মাণ কাজ
অসমাপ্ত থেকে
যায়।
এরপর
সুবাদার শাইস্তা খান এই
কেল্লার দায়িত্ব গ্রহণ
করেন।
তবে
১৬৮৪
সালে
শাইস্তা খানের
কন্যা
পারীবিবি অকাল
মৃত্যু
বরণ
করলে,
তিনি
কেল্লার নির্মাণকাজ বন্ধ
করে
দেন।
এ
থেকেই
মনে
করা
হয়
যে,
লালবাগ
কেল্লার নির্মাণকাজ কখনোই
পুরোপুরি শেষ
হয়নি।
স্থাপত্যশৈলী ও বৈশিষ্ট্য
লালবাগ
কেল্লার স্থাপত্যে মুঘল
আমলের
চমৎকার
নকশার
প্রতিফলন দেখা
যায়।
সমগ্র
কেল্লাটি একটি
প্রশস্ত এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, যেখানে
রয়েছে:
- পারীবিবির
মাজার: সাদা মার্বেল পাথরের তৈরি চমৎকার এক মাজার। এটি কেল্লার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- শাহী
মসজিদ: তিনটি বিশাল গম্বুজ সম্বলিত এ
মসজিদটিতে রয়েছে অপূর্ব কারুকাজ।
- দরবার
হল (Diwan-i-Aam):
যেখানে শাসকেরা জনসাধারণের সাথে মিলিত হতেন এবং বিচার করতেন।
- গোপন
সুড়ঙ্গপথ: বলা হয়, কেল্লার ভেতরে গোপন সুড়ঙ্গ ছিল, যা ঢাকার বাইরে অন্য দুর্গগুলোর সঙ্গে সংযোগ করত।
প্রচুর
বাগান,
জলাধার,
বিশ্রামাগার এবং
সুরক্ষিত প্রাচীর কেল্লাটিকে এক
অনন্য
সৌন্দর্যে ভরিয়ে
রেখেছে।
লালবাগ কেল্লার ঐতিহাসিক গুরুত্ব
লালবাগ
কেল্লা
মুঘল
শাসনের
এক
গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এটি
শুধু
এক
দুর্গ
নয়,
বরং
বাংলার
রাজনীতির, সংস্কৃতির ও
প্রশাসনিক ইতিহাসের এক
গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের প্রতিনিধি। এই
কেল্লা
আমাদের
স্মরণ
করিয়ে
দেয়
কিভাবে
মুঘল
শাসকেরা প্রশাসনিক কাজের
পাশাপাশি শিল্প
ও
স্থাপত্যকে গুরুত্ব দিতেন।
কিভাবে যাবেন
লালবাগ
কেল্লা
ঢাকা
শহরের
পুরান
ঢাকায়
অবস্থিত। খুব
সহজেই
বাস,
রিকশা
অথবা
ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ে
পৌঁছানো যায়।
কাছাকাছি বড়
কোনো
স্থানীয় পরিচিতি হিসেবে
রয়েছে
চকবাজার এবং
আজিমপুর কবরস্থান।
খোলা সময়:
- গ্রীষ্মকালীন
সময়: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
- শীতকালীন
সময়: সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
টিকিট মূল্য: - বাংলাদেশি
নাগরিকদের জন্য সাধারণত ২০ টাকা।
- বিদেশি পর্যটকদের
জন্য ২০০ টাকা।
আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
লালবাগ
কেল্লা
ভ্রমণের পাশাপাশি পুরান
ঢাকার
আরও
কিছু
দর্শনীয় স্থান
একসঙ্গে দেখে
নেওয়া
যেতে
পারে:
- হোসেনি
দালান
- আরমানিটোলা
মসজিদ
- বড়
কাটরা
- চকবাজারের
বিখ্যাত খাবার
- নর্থব্রুক
হল
লালবাগ কেল্লা সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য
- লালবাগ কেল্লার নির্মাণের
সময় প্রায় ১৫০ একর জমির উপর পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
- জনশ্রুতি
আছে, গোপন সুড়ঙ্গপথ দিয়ে নবাবেরা শত্রু আক্রমণের সময় পালিয়ে যেতেন।
- পারীবিবির
মাজারটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মার্বেল সমাধিগুলোর একটি।
- ব্রিটিশ আমলে লালবাগ কেল্লা সৈন্য ব্যারাক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছিল।
- এখনো গবেষকরা মনে করেন, কেল্লার নিচে বহু রহস্যময়
কক্ষ এবং পথ রয়ে গেছে, যেগুলো আবিষ্কার হয়নি।
আধুনিককালে লালবাগ কেল্লা
বর্তমানে লালবাগ
কেল্লা
বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে
সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে
নিয়মিত সংস্কার কার্যক্রম চালানো
হয়
যাতে
এই
ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য
টিকে
থাকে।
এছাড়া,
বিভিন্ন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা, ডকুমেন্টারি চিত্রায়ণ, ট্যুর
গাইড
সার্ভিস ইত্যাদির জন্য
লালবাগ
কেল্লা
খুবই
জনপ্রিয় স্থান।
লালবাগ কেল্লায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
যখন
আপনি
লালবাগ
কেল্লায় প্রবেশ
করবেন,
প্রথমেই মনে
হবে
যেন
আপনি
কয়েকশো
বছর
পেছনে
চলে
গেছেন।
কেল্লার প্রতিটি করিডোর,
বাগান
আর
গম্বুজ
আপনার
মনে
ইতিহাসের এক
জীবন্ত
অনুভূতি সৃষ্টি
করবে।
বিশেষ
করে
বিকেলের দিকে
সূর্যের আলো
যখন
পুরনো
ইটের
গায়ে
পড়ে,
তখন
দৃশ্যপট যেন
আরো
মায়াময় হয়ে
ওঠে।
উপসংহার
লালবাগ
কেল্লা
শুধুমাত্র এক
টুকরো
প্রাচীন ইতিহাস
নয়,
এটি
বাংলাদেশের গর্ব।
প্রতিটি ইটের
ভাঁজে
ভাঁজে
ইতিহাস
কথা
বলে।
মুঘল
স্থাপত্যের অপূর্ব
নিদর্শন ও
পুরান
ঢাকার
অন্যতম
আকর্ষণীয় স্থান
হিসেবে
লালবাগ
কেল্লার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
প্রত্যেক ইতিহাসপ্রেমী ও
ভ্রমণপিপাসুর জীবনে
অন্তত
একবার
এই
মহামূল্যবান নিদর্শন দর্শন
করা
উচিত।
শেষ কথা
যদি
আপনি
ইতিহাসকে ভালোবাসেন, অথবা
প্রাচীন সৌন্দর্যের মাঝে
হারিয়ে যেতে
চান
— তাহলে
একদিন
লালবাগ
কেল্লায় ঘুরে
আসুন।
আপনার
অভিজ্ঞতা হবে
অনন্য,
আর
মনে
থাকবে
আজীবন।
Comments
Post a Comment